কানপুরে টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর মিরপুরে শেষ টেস্ট খেলার ইচ্ছা পূরণ হয়নি সাকিব আল হাসানের। চট্টগ্রাম টেস্টের আগে আবার আলোচনা—বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিতে পারেন নাজমুল হোসেন। বাংলাদেশের ক্রিকেট মানেই যেন খেলার সমান্তরালে অন্য আলোচনাও!
চট্টগ্রাম টেস্টের আগে আজ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করামের কাছে। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশ দলের এ রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাওয়াটাকে কীভাবে দেখছেন তিনি?
মার্করাম পরিষ্কার করেই বলেছেন,
এ বিষয়ে খুব বেশি মনোযোগ তাঁরা দিচ্ছেন না। কারণ, এটা বাইরের একটা বিষয়। তাঁদের পুরো মনোযোগই নিজেদের খেলায়। তবে এটাও বলেছেন, এ রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাওয়া কোনো দলের জন্যই প্রত্যাশিত নয়, ‘পারফরম্যান্সের নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। তবে পরিবেশটা অন্তত ঠিক রাখা যায়। বাংলাদেশ দল এখন যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা দুর্ভাগ্যজনক।’
আমরা সব সময়ই প্রতিপক্ষের প্রশংসা করি, বিশেষ করে বাংলাদেশ যখন নিজেদের কন্ডিশনে খেলে। কোনো সন্দেহ নেই, এটা আমাদের জন্য কঠিন একটা ম্যাচ হতে যাচ্ছে।
এইডেন মার্করাম, দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক
ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চলতি চক্রের পয়েন্ট তালিকায় দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান এখন পাঁচ নম্বরে। তাদের আগে আছে নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া ও সবার ওপরে ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য শীর্ষে যাওয়াটা তাই অঙ্কের হিসাবে সম্ভব হলেও বাস্তবে একটু কঠিন। তবে দলের অধিনায়ক মার্করাম এটাকে কোনো চাপই মনে করছেন না।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টেস্ট–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মার্করাম বলেছেন, ‘আমাদের হাতে এখনো পাঁচটি টেস্ট ম্যাচ আছে এবং আমাদের সম্ভবত বেশির ভাগ ম্যাচই জিততে হবে। পাঁচটি টেস্ট মানে অনেক খেলা। কাজেই আমরা এখন যেখানে আছি, সেখান থেকে এটা খুবই সম্ভব। আশা করি, আমরা সেশন ধরে ধরে, ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে পারব, আমাদের সুযোগটা বাড়াব।’
কাল থেকে শুরু চট্টগ্রাম টেস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য সেই লক্ষ্যের দিকে আরেকটু এগোনোর উপলক্ষ। মিরপুরে বৃষ্টিবিঘ্নিত টেস্টটাও জিতে যাওয়ার পর মার্করামের এখন আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই। তার ওপর মিরপুরের জয়টা ছিল উপমহাদেশেই ১০ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো টেস্ট জয়। এর আগে ২০১৪ সালে গলে সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতেছিল তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আসার আগপর্যন্ত জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট না দেখলেও মার্করাম এটা বেশ বুঝতে পারছিলেন যে এখানকার উইকেট মিরপুরের উইকেটের মতো হবে না। পরে অবশ্য মাঠে ফিরে তিনি উইকেট দেখেছেন এবং সেখানে ঢাকার তুলনায় রান করাটা একটু সহজ হবে বলেই অনুমান করছেন।
মিরপুরের জয় দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য তাই বিরাট এক স্বস্তি হয়ে এসেছে। মার্করামের কথায়, ‘অবশ্যই এটা আমাদের ড্রেসিংরুমে আনন্দের একটা মুহূর্ত হয়ে এসেছে। একটা ভালো দল সব সময় জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার পথ খোঁজে এবং এই টেস্টে (চট্টগ্রাম) আমরা সে জন্যই ঝাঁপিয়ে পড়ব।’ দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক অবশ্য তাঁর কথায় ঘরের মাঠের বাংলাদেশের প্রতি একটু সমীহও মিশিয়ে দিলেন, ‘আমরা সব সময়ই প্রতিপক্ষের প্রশংসা করি, বিশেষ করে বাংলাদেশ যখন নিজেদের কন্ডিশনে খেলে। কোনো সন্দেহ নেই, এটা আমাদের জন্য কঠিন একটা ম্যাচ হতে যাচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আসার আগপর্যন্ত জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট না দেখলেও মার্করাম এটা বেশ বুঝতে পারছিলেন যে এখানকার উইকেট মিরপুরের উইকেটের মতো হবে না। পরে অবশ্য মাঠে ফিরে তিনি উইকেট দেখেছেন এবং সেখানে ঢাকার তুলনায় রান করাটা একটু সহজ হবে বলেই অনুমান করছেন। সেটি হলে ওপরের দিকের ব্যাটসম্যানদের কাছে তাঁর প্রত্যাশা পূরণটাও হয়তো সহজ হবে।
ওপরের দিকের ছয় ব্যাটসম্যানের কাছে প্রত্যাশার প্রশ্নে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমি চাই ওরা রান করুক। প্রত্যেক ব্যাটসম্যানেরই নিজের শক্তিকে কাজে লাগানোর নিজস্ব উপায় থাকে। তারা নিশ্চয়ই বাংলাদেশের বোলারদের চাপে ফেলার উপায় বের করে নেবে, যেটা রান করার কাজটা সহজ করে তুলবে। ব্যাটিংটা নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আমাদের সেরা ৬ ব্যাটসম্যানই দলের জন্য অবদান রাখতে উম্মুখ হয়ে আছে।’
মিরপুর টেস্টে বৃষ্টির বাগড়া থাকলেও চট্টগ্রামে সে সম্ভাবনা নেই। এখানে বরং আছে চামড়া পোড়ানো প্রচণ্ড গরম। দক্ষিণ আফ্রিকা দলের জন্য তো বটেই, এই গরমে খেলা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্যও সহজ হওয়ার কথা নয়। তবে আবহাওয়ার ওপর তো কারও হাত নেই। মার্করাম তাই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বিকল্প দেখছেন না, ‘আবহাওয়ার প্রশ্নে খুব বেশি কিছু করার নেই। আমাদের প্রচুর পানি পান করতে হবে এবং শরীর যতটা সম্ভব ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে।’
টেম্বা বাভুমা পুরোপুরি চোটমুক্ত না হওয়াতেই চট্টগ্রাম টেস্টেও অধিনায়ক থাকছেন মার্করাম। বিকল্প ভূমিকাটা বেশ উপভোগ করছেন তিনি, ‘নিজের দেশকে নেতৃত্ব দেওয়াটা সব সময়ই আনন্দের, বিশেষ করে টেস্ট ম্যাচে। আমি এটা বেশ উপভোগই করছি। অধিনায়ক হিসেবে খেলায় ভূমিকা রাখতে পারাটা দারুণ। তবে শেষ পর্যন্ত আসল পার্থক্যটা গড়ে দেয় খেলোয়াড়েরাই।’