কেবল জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডই নয়, গত ১৫ বছরে সব অপকর্মের বিচার করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এমনকি, শেখ হাসিনাকেও ভারত থেকে ফেরত চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তিতে রোববার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ড. ইউনূস এ কথা জানান।
স্বৈরশাসনে বিপর্যস্ত এই দেশকে পুনর্গঠন করতে হচ্ছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন,
‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর আমরা এমন একটি দেশ হাতে পেয়েছি যার সর্বত্র ছিল বিশৃঙ্খলা। স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছিল। বিপ্লব চলাকালে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-শ্রমিক জনতার শহিদী মৃত্যু হয়। প্রতিদিনই তালিকায় আরও নতুন নতুন শহিদের তথ্য যোগ হচ্ছে।’
‘যারা স্বৈরাচারের আক্রোশের শিকার হয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, তাদের প্রতিটি হত্যার বিচার আমরা করবই। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তার কাজও বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব।’
তিনি বলেন, ‘কেবল জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডই নয়, আমরা গত ১৫ বছরে সব অপকর্মের বিচার করব। অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে, খুন হয়েছে এই সময়ে।’
গুমের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন,
‘কমিশন প্রধান আমাকে জানিয়েছেন, অক্টোবর পর্যন্ত তারা ১ হাজার ৬০০ গুমের তথ্য পেয়েছেন। তাদের ধারণা, এই সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।’
‘অনেকেই কমিশনের কাছে গুমের অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন এই ভেবে যে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা তারা আবার আক্রান্ত হতে পারেন, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা দ্বিধাহীন চিত্তে কমিশনকে আপনাদের অভিযোগ জানান। কারও সাধ্য নেই আপনাদের গায়ে আবার হাত দেয়।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন,
‘গুম কমিশনের সদস্যদের কাছে ভুক্তভোগীদের যে বিবরণ আমরা পেয়েছি তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর শিক্ষার্থীরা শহর-বন্দরের দেয়ালে দেয়ালে তাদের মনের কথা লিখেছে। তাদেরও আগে যারা গুমের শিকার হয়েছে, প্রতিটি গোপন আস্তানার দেয়ালে দেয়ালে তারা লিখে গেছেন তাদের কষ্টের মর্মস্পর্শী বিবরণ। তাদের এসব কষ্টের কথা শুনে আমাদের হৃদয় কেঁপে উঠেছে। এসবের সঙ্গে জড়িতদের আমরা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবই।’
‘অভিযুক্ত যতই শক্তিশালী হোক, যে বাহিনীরই হোক, তাকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেবল দেশে নয়, গুম, খুন ও জুলাই-আগস্ট গণহত্যার সাথে জড়িতদের আমরা আন্তর্জাতিক আদালতেও বিচারের উদ্যোগ নিয়েছি। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের সাথে আমার এ ব্যপারে ইতোমধ্যে কথা হয়েছে।’
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলোর কোনো সদস্য কিংবা অন্য কেউ যাতে হত্যা, গুমসহ এ ধরনের কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে না পারে এ জন্য গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সাক্ষর করা হয়েছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।
এ বিষয়ে তিনি বলেন,
‘আপনারা দেখেছেন, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন। জাতিসংঘ জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের তদন্তে আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তারা তাদের রিপোর্ট আমাদের কাছে হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’
তিনি জানান, অতীতের গুমের ঘটনাগুলোর তদন্ত কাজেও নিয়মিত তাদের (জাতিসঙ্ঘ) সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। মানবাধিকার রক্ষায় সহযোগিতা করতে ঢাকায় তারা তাদের জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। জাতিসঙ্ঘের সেই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।