প্রথম দিন বৃষ্টিতে পন্ড হওয়ার পর রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের দ্বিতীয় দিনে পাকিস্তানকে ২৭৪ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ।
বিনা উইকেটে ১০ রান নিয়ে সেই দিন শেষ করেছিলেন সাদমান ইসলাম এবং জাকির হাসান।
তৃতীয় দিনের শুরুটা ভালো করেনি বাংলাদেশ। বেশ কয়েকবার পাকিস্তানের পেসারদের কাছে পরাস্ত হতে হতে শেষ পর্যন্ত বিদায় নেন জাকির হাসান। ১৬ বলে এক রান করা এই ওপেনারকে ফেরান খুররম শাহজাদ।
দিনের শুরু থেকে অস্বস্তিতে ছিলেন জাকির। পঞ্চম ওভারে মির হামজার বলে দুবার অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন এই বাঁহাতি ওপেনার। ওভারের প্রথম বলে স্কয়ার লেগে ঠিকমতো ক্যাচ নিতে পারেননি আবরার আহমেদ। এরপর পঞ্চম বলে রিভিউ নিতে ব্যর্থ হয়। হামজার ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি অন সাইডে খেলার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বল প্যাডে লাগান জাকির। তাতে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নেয়নি পাকিস্তান। পরে দেখা যায় বলটি লেগ স্টাম্পে পরিষ্কারভাবেই আঘাত হানে।
দিনের চতুর্থ ওভারে আর ‘জীবন’ পাননি জাকির। খুররম শাহজাদের করা ওভারের শেষ বলে স্কয়ার লেগে আবরার আহমেদের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি। এরপরের ওভারের প্রথম বলে সাদমানকে ফেরান এই পেসার। খুররমের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন ২৩ বলে ১০ রান করা সাদমান। ১৪ রানে প্রথম উইকেট হারানো বাংলাদেশ ১৯ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায়। দলীয় ২০ রানে বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং মুমিনুল হকও।
সাদমানকে ফেরানোর সেই ওভারের চতুর্থ বলে শান্তকেও বিদায় করেন খুররম। তার ফুল লেংথ ডেলিভারিটি ভেতরে ঢোকার সময়ে অন সাইডে খেলার চেষ্টা করে স্টাম্প হারান চার রান করা শান্ত। অষ্টম ওভারে খুররমের জোড়া আঘাতের পর নবম ওভারের প্রথম বলে মুমিনুলকে মিড অনে মোহাম্মদ আলীর ক্যাচ বানান মীর হামজা।
স্লোয়ার বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন এক রান করা মুমিনুল। সব মিলিয়ে ১৪ বলের মধ্যে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। জাগে ফলো-অনের শঙ্কা। ফলো-অনের শঙ্কা জোরালো করে দলীয় ২৬ রানের মধ্যে ফিরে যান মুশফিকুর রহিম এবং সাকিব আল হাসান। মির হামজার করা ব্যাক অব লেংথের বলটি উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক।
৯ বলে তিন রান আসে তার ব্যাটে। ঠিক পরের ওভারেই (১২তম) দশ বলে দুই রান করা সাকিবকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেন খুররম। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি সাকিব।
সাকিব-মুশফিক ফেরার পর উইকেটে নেমেই ইতিবাচকভাবে খেলতে থাকেন মেহেদী হাসান মিরাজ এবং লিটন। পাকিস্তানের বোলারদের বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলতে থাকেন মিরাজ, তাকে সঙ্গ দেন লিটন। প্রথম ঘণ্টায় ছয় উইকেট হারানো বাংলাদেশ সেশনের বাকি সময়ে আর উইকেট হারায়নি। ৩৪ বলে ৬ উইকেট হারানোর পর লিটন-মিরাজের ব্যাটে ফলোঅন এড়িয়েছে বাংলাদেশ। সফলভাবেই ফলোঅন এড়িয়েছে দলটি। যার মূল কৃতিত্ব লিটন এবং মিরাজের। সপ্তম উইকেটে দুজনে মিলে ১০৭ রানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন আছেন।
ইতোমধ্যে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন দুজনই। ক্যারিয়ারের ১৮তম হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন লিটন। অপরদিকে অষ্টম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মিরাজ। দেখতে দেখতে লিটন-মিরাজের জুটি দেড়শ রান পেরিয়ে যায়। তাদের ১৬৫ রানের জুটি ভাঙেন খুররম। একইসাথে নিজের পঞ্চম উইকেটও পূরণ করেন তিনি। খুররমের স্লোয়ার বুঝতে পারেননি মিরাজ, সোজা ব্যাটে খেলতে গিয়ে বোলারের হাতেই সহজ ক্যাচ ছুঁড়ে দেন তিনি।
১৯১ রানে সাত উইকেট হারালো বাংলাদেশ। ১২৪ বলে ১২টি চার ও একটি ছক্কায় ৭৮ রান করে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। এরপর তাসকিন আহমেদের উইকেটও হারায় বাংলাদেশ। মিরাজকে ফেরানোর এক ওভার পর তাসকিনকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন খুররম। এটা তার ষষ্ঠ উইকেট। সাত উইকেটে ১৯৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় সেশন শেষ করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের থেকে এখনও ৮১ রান পিছিয়ে বাংলাদেশ।
তাসকিন আহমেদকে হারিয়ে চা বিরতিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। বিরতি থেকে ফিরে হাসান মাহমুদকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন লিটন দাস। ধৈর্য্যের পরীক্ষায় উতরে গিয়ে সেঞ্চুরিও তুলে নিয়েছেন তিনি। আবরার আহমেদের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে থার্ডম্যান দিয়ে কাট করে চার মেরে ১৭১ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি করেছেন লিটন। পাকিস্তানের বিপক্ষে যা দ্বিতীয়। এদিকে প্রথম ব্যাটার হিসেবে দলের রান পঞ্চাশ হওয়ার আগেই ব্যাটিংয়ে নেমে সেঞ্চুরি করেছেন টপ ফাইভের বাইরে থেকে।