জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্যদের মধ্য থেকে সংস্থার চেয়ারম্যান নিয়োগের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন। সংস্থাটির নেতারা মনে করেন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কাজে দীর্ঘদিনে অভিজ্ঞতালব্ধ সদস্যদের মধ্য থেকে এনবিআরের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
এ ছাড়া কর বিভাগকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
দেশ থেকে অবৈধ ও বেআইনিভাবে পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়ার জন্যও দাবি জানানো হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে।
আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশনের আলোচনা সভায় এসব দাবি করা হয় বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় সংগঠনের সভাপতি লুৎফুল আজীম সভাপতিত্ব করেন। এতে কর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় কর বিভাগের সংস্কারের দাবি করা হয়।
সংগঠনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও জনতার গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্র মেরামত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় বাস্তবায়নের প্রধান চ্যালেঞ্জ রাজস্ব আহরণ। কর বিষয়ে অনভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে এনবিআরের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ায় ক্রমেই অকার্যকর হয়েছে এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো।
এদিকে আজ সকালে আগারগাঁওয়ের এনবিআরের ভবন প্রাঙ্গণে শুল্ক, কর ও ভ্যাট বিভাগের উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারী বিক্ষোভ করেন। সেখানে তাঁরা এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের পদত্যাগ দাবি করেন। এ সময় তাঁরা কর্মবিরতি কর্মসূচিও পালন করেন। গত দুই দিন এনবিআর চেয়ারম্যান অফিস করছেন না।
পাচার হওয়া টাকা পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি কর কর্মকর্তাদের
পাচার হওয়া টাকা পুনরুদ্ধারের জন্য কর্মকর্তাদের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি। এর কিছু কারণ হল:
- অর্থনৈতিক ক্ষতি: পাচার হওয়া টাকা দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
- সরকারি রাজস্ব ক্ষয়: পাচার হওয়া টাকা সরকারি রাজস্ব হারানোর কারণ হয়, যা সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে।
- দুর্নীতি ও অপব্যবহার: পাচার হওয়া টাকা দুর্নীতি ও অপব্যবহারের প্রমাণ, যা জনসাধারণের আস্থা ক্ষয়ের কারণ হয়।
- আন্তর্জাতিক চাপ: অন্যান্য দেশসমূহের কাছে এই সমস্যা নিয়ে দায়িত্বশীল হতে হয় এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখোমুখি হতে হয়।
তাই সরকারের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক অবস্থান নিয়ে পাচার হওয়া টাকার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। এটি না হলে দুর্নীতি ও অপচয় থেকে দেশকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না।
পাচার হওয়া টাকার পুনরুদ্ধারে কোন পদক্ষেপগুলি ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে?
পাচার হওয়া টাকা পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি ইতিমধ্যে নিয়েছেন:
- দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিশন (ACC) গঠন: সরকার দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিশন (ACC) গঠন করেছে, যা পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারসহ বিভিন্ন ভ্রষ্টাচার প্রতিরোধের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
- আইনি ব্যবস্থার শক্তিশালীকরণ: সরকার দুর্নীতি ও অর্থ পাচার বিরোধী আইনগুলি আরও কঠোর করেছে এবং কার্যকর প্রয়োগের জন্য আইনি ব্যবস্থা শক্তিশালী করেছে।
- আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: সরকার পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারে আন্তর্জাতিক অর্গানাইজেশনগুলির সাথে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়িয়েছে।
- ব্যাংক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন: ব্যাংকিং খাতে শক্তিশালী পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে এবং অনলাইন লেনদেনের ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে।
- সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়: সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে আরও ভালো সমন্বয় ও তথ্য বিনিময় করা হচ্ছে।
এই পদক্ষেপগুলি পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তবে এ বিষয়ে আরও বেশি উদ্যোগ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
অর্থ পাচার প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উদাহরণ কী কী?
অর্থ পাচার প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক স্তরে যে কয়টি প্রধান উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তার কিছু উদাহরণ হলো:
- ফাইনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF) – এটি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা অর্থ পাচার এবং আতঙ্কবাদের অর্থায়ন প্রতিরোধের জন্য মানদণ্ড তৈরি করে এবং এর বাস্তবায়ন এর উপর দেখাশোনা করে।
- অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং (AML) সহযোগিতা – বিভিন্ন দেশের মধ্যে তথ্য, বিশ্লেষণ এবং অনুসন্ধান সহযোগিতা।
- অর্থ পাচার দমনে জি-8 এবং জি-20 গ্রুপসমূহের উদ্যোগ – এই দুই গ্রুপ অর্থ পাচার এবং অন্যান্য আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধের জন্য সমন্বয়ে কাজ করে।
- আঞ্চলিক সহযোগিতা – দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশগুলির মধ্যে অর্থ পাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত তথ্য ও অভ্যাস বিনিময়।
- আর্থিক গোপনীয়তা সংক্রান্ত চুক্তি – যেমন, শ্রোত সংস্থার প্রয়োজনীয়তা এবং তথ্য বিনিময় চুক্তিগুলি।
এসব উদ্যোগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ছে এবং অর্থ পাচার প্রতিরোধে ফলপ্রসূ হয়ে উঠছে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রভাব বিস্তারিত জানার জন্য আরও উদাহরণ দেওয়া যাবে?
অর্থ পাচার প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আরও কিছু উদাহরণ দেওয়া যায়:
- ইন্টারপোল-ইগমন্ট অপারেশন: ইন্টারপোল এবং ইগমন্ট (Egmont Group) একসাথে কাজ করে, যার ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে তথ্য বিনিময় এবং অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অর্থ পাচার প্রতিরোধ করা যায়।
- মানি ট্রান্সফার সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ: বিভিন্ন দেশের মধ্যে মানি ট্রান্সফার সংক্রান্ত তথ্য-বিনিময় এবং নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অর্থ পাচার প্রতিরোধ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ফান্ড ট্রান্সফার ইনফরমেশন ফর ফান্ড ট্রান্সফার (FATF) প্রয়োজনীয়তা।
- ব্যাংক সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা: ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অর্থ পাচার সংক্রান্ত তথ্য শেয়ারিং এবং সহযোগিতা করার মাধ্যমে অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা যায়।
- বিশ্ব ব্যাংক এবং আইএমএফ’র উদ্যোগ: এই প্রতিষ্ঠানগুলি দেশগুলিকে অর্থ পাচার প্রতিরোধের জন্য আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোতে সহায়তা করে।
- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব: জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ অর্থ পাচার এবং জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রস্তাব গ্রহণ করে যা বিশ্বব্যাপী প্রয়োগ করা হয়।
এসব উদাহরণ দেখায় যে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলি মিলে কাজ করে অর্থ পাচার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।